অনুমতি ছাড়া ও নিয়ম না মেনে সুপ্রিম কোর্টের এফিডেভিট শাখায় অবস্থান করায় আইনজীবী সহকারী, হলফনামাকারী ও তদবিরকারী ৪৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাইকোর্ট বিভাগের এফিডেভিট শাখায় আকস্মিক অভিযানে যান আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী।
সেখানে শাখার ভেতরে আইনজীবীদের সহকারী, হলফনামাকারী, তদবিরকারী ৪৩ জনকে একত্রে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বিবিসিকে জানান, ”এফিডেভিট শাখায় নিয়ম না মেনে এবং কারণ ছাড়াই প্রবেশ করা ৪৩জনকে পাওয়া যাওয়ায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই সময় বারের নেতৃবৃন্দও আসেন। পরে এই ব্যক্তিরা আর এভাবে প্রবেশ করবেন না, এমন অবগত হওয়ার পর বার নেতৃবৃন্দের দায়িত্বে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।”
যে কারণে হঠাৎ অভিযান
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বিবিসি বাংলাকে বলছেন, কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট, আইনজীবী সমিতি, অ্যাটর্নি জেনারেল মিলে যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে আমরা সুপ্রিম কোর্টের ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়ম নিয়ে কথা বলেছিলাম। সেখানে এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখানোর ব্যাপারে কথা হয়েছে।
গত আটই অগাস্ট একটি বৈঠকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কী ধরণের অভিযান তারা করেছেন, জানতে চাইলে রুহুল কুদ্দুস বলছেন, অনেক সময় মামলার ফাইলিং, এফিডেভিট ইত্যাদি ক্ষেত্রে অর্থের লেনদেনের বিনিময় হয়। ফলে আইনজীবীরা যেমন বঞ্চিত হন, বিচার প্রার্থীরাও বঞ্চিত হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইনজীবী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে সুপ্রিম কোর্টের এফিডেভিট শাখায় এখন চাপ একটু বেশি। এ কারণে মামলার সিরিয়াল এগিয়ে দেয়া, সার্টিফিকেশন, ওকালত নামায় সিল, টেন্ডার নম্বরের জন্য অনেকে তদবির করে থাকেন। চেনা পরিচয় বা কিছু অর্থের বিনিময়ে কজলিস্টে আগে নম্বর দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে থাকে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বলছেন, ”এফিডেভিট করার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতির প্রচলন আছে। এর মাধ্যমে মানুষ হয়রানির শিকার হয়, আইনজীবীরা বঞ্চিত হয়। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজকে বিচারপতি ইমান আলী সাহেব সেকশন ভিজিটে এসেছেন। সেখানে তিনি যাদের পেয়েছেন, তাদের আটক করেছেন।”
”পরে খবর পেয়ে আমরা গিয়ে বলেছি, আমাদের ক্লার্ক যারা আছেন, ভবিষ্যতে তারা আর এভাবে আসবেন না। এবং তারা যদি অন্যায় করে থাকেন, সেটা আমরা বারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
একজন আইনজীবী সহকারী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, আগে আমরা ভেতরে ঢুকে ফাইল করতে পারতাম। তবে ১২ তারিখ থেকে নতুন নিয়ম করেছেন। কিন্তু অনেক চাপের কারণে সময় বেশি লাগছিল। তাই আমাদের কেউ কেউ ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। -বিবিসি
0 Comments